মাওবাদী নেতা গণপতি পশ্চিমবঙ্গের
নির্বাচনী লড়াইয়ের কিছু দিন আগে একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেণী চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তিনি না-কি জানেন যে মমতাদেবী
সাম্রাজ্যবাদী চক্র এবং ভারতের মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া ও সামন্ত শ্রেণীর পক্ষেরই লোক।
কিন্তু এসব বলার সাথে সাথে তিনি এও বলেন যে সিপিআই (এম)-কে সরিয়ে তৃণমূলীরা
ক্ষমতায় এলে মমতাদেবী প্রথম দিকে ‘প্রশাসনকে শক্ত হাতে ধরে রাখতে’ চেষ্টা করবেন এবং তাঁর সরকার ‘নির্বাচনী
প্রতিশ্রুতির কথা মাথায় রেখে জনগণের ওপর সাময়িকভাবে আক্রমণ বন্ধ করবে।’
শক্ত হাতে প্রশাসনের রাশ
ধরা বলতে গণপতি কি বুঝিয়েছেন তা তিনিই জানেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একদল মানুষ যুদ্ধ
ঘোষণা করবেন এবং উলটো দিকে রাষ্ট্রের ধামাধারীরা তাদের ওপর আঘাত না নামিয়ে এনে
বিমূর্তভাবে প্রশাসনের হাত শক্ত করবেন – এটা কি আদৌ সম্ভব? প্রশাসনের
হাত শক্ত করতে হলে প্রাথমিকভাবে যেটা করতে হয় সেটা হ’ল
রাষ্ট্র ও প্রশাসন-বিরোধী শক্তিগুলোকে উচ্ছেদ করা। মাও-সর্বাধিনায়ক যা বলেন তা
নিজে বোঝেন তো?
সাময়িক আক্রমণ বন্ধের
আশায় বুক বেঁধে সমষ্টিকে অংশের স্বার্থে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়েছিল মাওবাদীরা।
অবতীর্ণ হয়েছিল জার্মান ‘ব্রাউন শার্ট’-এর ভূমিকায়। জঙ্গল মহল ও তার লাগোয়া
৪২টা আসন তৃনমূলী গুণ্ডাদের হাতে তুলে দিতে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল একের পর এক
গরিব সিপিআই (এম) সমর্থক-কে। কিন্তু ঐ যে, ইতিহাস বড় রসিক
পুরুষ! ফ্যাসিস্টদের কামানের গোলা হওয়াটাই ‘ব্রাউন শার্ট’-দের পরিণতি। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। ক্ষমতা পেয়ে প্রথমেই হিটলার এদেরকেই
নিকেশ করেছিল। অন্ধ্রে রাজশেখর রেড্ডির কংগ্রেস সরকারও হেঁটেছিল একই রাস্তায়।
মমতাদেবীও দেখানো পথেই পা বাড়িয়েছেন।
গত সারে-চার মাসে গণপতির
সমস্ত আশায় ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিয়েছেন বাংলার নয়া মুসোলিনি। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসামাত্র কাজে হাত দিয়েছেন মমতাদেবী। জঙ্গল মহল থেকে
যৌথবাহিনী তুলে নেওয়ার পরিবর্তে কেন্দ্রের কাছে আরও বেশী বাহিনীর সুপারিশ করেছেন। ‘সাময়িকভাবে আক্রমণ বন্ধ’ রাখার বদলে ইতিমধ্যেই
তৃণমূলী সরকার একের পর এক জনবিরোধী নীতি গ্রহণ ক’রে মানুষের
ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। গত ক’মাসে দশ হাজারেরও বেশী
পাট্টাদার ও বর্গাদার কৃষক-কে উচ্ছেদ হতে হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন
মাও-সমর্থক ও নেতৃস্থানীয় কমরেড। জঙ্গল মহল এলাকায় সালোয়া জুড়ুমের মতো বাহিনী
তৈরির কাজও চলছে জোর কদমে। দালাল এবং ফোড়ে-রা আজ বাংলার মালিকে পরিণত হয়েছে। গোটা
রাজ্যেই চরম নৈরাজ্য।
এদিকে জুতো খেয়ে সম্বিৎ
ফিরেছে মাওবাদীদের। পিঠ বাঁচাতে তারা এখন পাল্টা মার দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু
এতদিনের অন্যায় আঁতাতের ফলে তাদের অনেক ঘাঁতঘোতই (এমন কি বেশ কিছু শেল্টার-ও)
বর্তমান সরকারের জানা। গত দশকের শুরুর দিকে অন্ধ্র প্রদেশে এই একই লাইন অনুসরণ
করতে গিয়ে নিজেদের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি থেকে মাওবাদীদের পাততাড়ি গোঁটাতে হয়েছে।
বাংলাতেও সেই একই চিত্রনাট্য অভিনীত হতে দেখা যাচ্ছে।
কৌশল যদি নীতির ওপরে উঠে
যায় তাহলে যে সর্বনাশ ঘটে তা গণপতি ও তাঁর কমরেডরা আরও একবার বাংলার মাটিতে প্রমাণ
করলেন।
দেরি না করে এর থেকে
শিক্ষা নিন গণপতি। আর কতো দিন চলবে আপনাদের এই হাতুড়ে মার্কসবাদ চর্চা?
আজিজুল জানে এসব কথা?
ReplyDeleteসে সবই ত বুঝলাম... কে ফ্যাসিবাদী??? কে নইরাজ্যবাদী??? কিন্তু আসল কমিউনিস্টটা কে???? বলা ভাল কমিউনিস্ট শক্তি বা পারটিটি কে??? আপনাদের কোন পারটি তো আর নেই??? তাহলে কিসের ভিত্তিতে এই ইউনাইটেড ফ্রন্ট গরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন???
ReplyDelete