Man's dearest possession is life. It is given to him but once, and he must live it so as to feel no torturing regrets for wasted years, never know the burning shame of a mean and petty past; so live that, dying he might say: all my life, all my strength were given to the finest cause in all the world- the fight for the Liberation of Mankind. - Nikolai Ostrovsky

Monday, December 5, 2011

গর্ভের লজ্জা! (সম্পাদকীয়, 'এই তো সময়' প্রথম বর্ষ ২৯সংখ্যা, ৫ই ডিসেম্বর, ২০১১)




ফ্যাসিবাদীরা সাধারণত যে মই চেপে ক্ষমতার অলিন্দে উঠে আসে, সেটাকেই সবার আগে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে। তিনের দশকের জার্মানি থেকে আজকের পশ্চিম বাংলা এই নিয়মের কোনও পরিবর্তনহয়নি।
তবে মাওবাদী নেতা কিষাণজি ওরফে কোটেশ্বর রাও-এর হত্যা সম্পর্কে শুধু এইটুকু বললে সম্পূর্ণ বলা হয় না। কেননা, অন্য কারণেও ব্যাপারটা রীতিমতো ত্রাসজনক ও চিন্তার।
অনেকেরই হয়তো মনে আছে শান্তি আলোচনার নামে কিভাবে এনকাউন্টার’-এর ভান করে সিপিআই (মাওবাদী)-র মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আজাদ-কে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছিল চিদাম্বরম-এর খুনে বাহিনী। এর প্রতিবাদে সেদিন আশ্চর্যজনকভাবে সরব হয়ে উঠেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাও’-অধ্যুষিত জঙ্গল মহলের মাটিতে দাঁড়িয়ে আজাদ হত্যার তদন্ত দাবী করে কামনা করেছিলেন তাঁর আত্মার শান্তি। মাওবাদীরা বোঝেন নি, তবে রাজনীতি সচেতন মানুষজন বুঝতে পেড়েছিলেন ওটা কুমীরের কান্না। ক্ষমতায় এসে এই মমতাই যে সব মমত্বঝেড়ে ফেলে দানবত্বে হাত পাকাবেন এটা তাঁরা জানতেন।
কিন্তু এই দানব হয়ে ওঠার নেপথ্য-নায়ক কারা? কাদের প্ররোচনায় একে একে প্রাণ হারালেন আজাদ থেকে কিষাণজি? বড় বড় বুলি আউরে কারা খেলল আসল খেলাটা? কেন হঠাৎ পার্টির পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরো ও কেন্দ্রীয়  মিলিটারি কমিশন-এর প্রধান এবং পলিটব্যুরোর গুরুত্বপূর্ণ এই সভ্য তড়িঘড়ি অসম থেকে বাংলায় ঢুকলেন? কারা ডেকে আনলেন তাঁকে?
বিভিন্ন সূত্র থেকে শোনা যাচ্ছে, দিন কয়েক আগে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে শান্তি আলোচনারঅচলাবস্থা কাটাতে সরকারের ঠিক করা মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে আসাম থেকে উড়িষ্যা হয়ে বাংলায় আসেন অসুস্থ কিষাণজি। সুযোগটা পেয়ে যায় মমতা অ্যান্ড কোম্পানি। গত ২৩ তারিখ জঙ্গল মহলের বাঁকশোল থেকে তাঁকে পাকড়াও করে যৌথবাহিনী। সেদিনই ইউপিএ-এর খাস তালুক দিল্লীতে গোপন বৈঠকে বসেন কেন্দ্র ও রাজ্য রাজনীতির দুই মহারথী। সিদ্ধান্ত হয় কিষাণজি-কে নিকেশ করার। তার পর নিখুঁত চিত্রনাট্য রচনা করে ২৩-এ নভেম্বর কুশবনি জঙ্গল অভিযানে কিষাণজির পালিয়ে যাওয়ার কাহিনী প্রচার করা হয়। বেশী দূর তিনি যেতে পারেন নি এমন কথাও মিডিয়া মারফৎ জনগণের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই গত ২৪ তারিখ বুড়িশোলের জঙ্গলে মাও-বিরোধী অভিযানের নাম করে তাদের জিম্মায় থাকা মাওবাদী নেতাকে খুন করে যৌথবাহিনী। সাম্রাজ্যবাদের ছুঁড়ে দেওয়া হাড্ডিতে প্রতিপালিত মাধ্যমগুলো এই গল্পের কারিগরি প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
বলা বাহুল্য, আজাদ-হত্যার দায় যেমন গেরুয়াধারী অগ্নিবেশ এড়াতে পারেন না, তেমনই এক্ষেত্রে সুজাত ভদ্র-রাও তা পারেন না। হ্যাঁ, যতই তাঁরা এ সম্পর্কে তদন্তের দাবী তুলুন না কেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামক এই খুদে-ফ্যাসিস্ট (ইকোনমিক ডিটারমিনিজম-এ ভোগা পণ্ডিত-মূর্খরা যাই বলুন) সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির টহলদার, লুম্পেন পুঁজি ও পোচে যাওয়া সামন্ত শ্রেণীর প্রতিনিধি। তিনি যে এমন কাণ্ড ঘটাবেন এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সুজাতবাবুরা? সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে বলে তাঁরা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আর থাকতে চান না জানিয়ে তো চিঠি দিয়েছিলেন। আবার কেন তাহলে সেই কথা গিলে ফিরে এলেন? কীসের জন্য? কিষাণজি যে বাঁকশোলে রয়েছেন এটা তো একমাত্র তাঁদেরই জানার কথা। পুলিশ বা যৌথবাহিনী তা জানলো কি করে? প্রশ্নগুলো অতো সহজে মুছে যাবে না। চিত্রনাট্য অনুযায়ী নাটকের যবনিকা পতন হয়ে গেছে, তাই সুজাতবাবুরা ফিরিয়ে নেওয়া ত্যাগপত্র আবার নতুন করে পেশ করেছেন। কিন্তু তাতেও আজ নয় কাল, এর উত্তর সুজাত ভদ্র-দের দিতেই হবে।
কিষাণজির নৈরাজ্যবাদী রাজনীতির বলি হয়েছেন ২৭৩ জন খেতমজুর। ভ্রান্ত অন্ধ্র-লাইন’-এর অনুকরণ করতে গিয়ে বাংলার নকশাল আন্দোলনের শিক্ষাগুলোকে তিনি বিকৃত করেছেন, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে এই মানুষখেকো রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং তার অ্যাফিলিয়েটেড জিঞ্জার গ্রুপ’ (আমে-দুধে মিশে) দেশের সন্তানদের খুন করে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
এই খুনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার বামপন্থী নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসবাদী ও জনতার শত্রু আখ্যা দিয়ে হত্যা করার জন্য সর্বসাধারণের সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করছে তাই আর এক মুহূর্ত দেরী না করে পুরনো বিভেদ ভুলে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী শক্তিগুলোর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই চক্রান্ত রুখে দিতে হবে সময় হয়েছে শান্তি, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বুকনি বলা বদমায়েশগুলোকে পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করার। এরা ক্ষমার অযোগ্য। এরা জননীর গর্ভের লজ্জা!

1 comment:

  1. সরকার আর এই তথাকথিত মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে একটা আপাত দুরত্ব তৈরী করা হয়েছিল কিষেনজীদের চোখে ধুলো দেয়ার জন্যেই

    ReplyDelete