Man's dearest possession is life. It is given to him but once, and he must live it so as to feel no torturing regrets for wasted years, never know the burning shame of a mean and petty past; so live that, dying he might say: all my life, all my strength were given to the finest cause in all the world- the fight for the Liberation of Mankind. - Nikolai Ostrovsky

Tuesday, May 22, 2012

আজিজুল-এর কণ্ঠরোধ করতে চাইছে ‘প্রতিদিন’ এবং তৃণমূলী মিডিয়া - পর্যবেক্ষক ('এই তো সময়', দ্বিতীয় বর্ষ, ৪ সংখ্যা, ১৫ই মে, ২০১২)


বাজারে যত পত্র-পত্রিকা আছে তার মধ্যে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ কাগজখানা অতীব মোটা দাগের। এদের সাংবাদিকতার ধাঁচও বেশ চড়া। কি ভাষার ‘মাধুর্যে’, কি বাক্য গঠনের ‘মুনশিয়ানায়’ (বিষয়-বস্তুর কথা বাদই দিলাম!)—পরোতে পরোতে অশিক্ষার ‘মমতাময়’ কমিক রিলিফ জড়িয়ে আছে। ক’দিন আগে এক ছাত্রবন্ধু তো বলেই ফেললেন, ‘কাগজটা পড়লে মনে হয় এদের প্রধান সম্পাদকের বপু আর কার্যকরী সম্পাদকের মাথার আয়তন একে অপরের হাত ধরাধরি ক’রে চলছে—ডিরেক্টলি প্রোপোর্শানাল টু ইচ আদার।’ পাশ থেকে আর একজন তানপুরার সঙ্গত দিয়ে সুকুমারীয় ঢঙে ব’লে উঠল, ‘কবজি ছাব্বিশ ইঞ্চি, গলা ছাব্বিশ ইঞ্চি, বুক ছাব্বিশ ইঞ্চি, মাথা ...’। অন্য একজন ফুট কাটল, ‘মাথার সাইজ ডিরেক্টলি প্রোপোর্শানাল হলেও ভেতরে মস্তিষ্ক নামক যে পদার্থটা আছে সেটা বপুর সাথে ইনভার্সলি প্রোপোর্শানাল।’ বাধ্য হয়েই এবার থামাতে হ’ল তরুণদের। বললাম, ‘আরে ভাই, এরা কে কী তা এরা নিজেরাও ভাল জানে। এসব ব’লে কী লাভ? রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে সাথে তোমাদের একটা পারিবারিক সংস্কৃতিও তো আছে। তোমরাও যদি একইভাবে আক্রমণ করো তাহলে ঐ টুটু-কুণাল জাতীয় লোকজনদের upbringing-এর সাথে তোমাদের কোনও তফাৎ থাকে কি? চটুল কালিঘাটীয় ব্যাপারগুলো ‘দিদির ভাই’-দের জন্যেই থাক-না বরং।’ জনৈক পথচারী এসব শুনে এক গাল হেসে বললেন, ‘তা যা বলেছেন। নেহাত কাপড়চোপড় পড়ে আছে, নাহলে ব্যাটাদের জঙ্গলেই মানাত ভালো।...’
ওপরের কথাগুলো থেকে মনে হতে পারে প্রতিদিন’-এর সবটাই কৌতুকপ্রদ। কিন্তু বাস্তবে তা নয় একেবারেই। গত ক’মাস ধ’রে এদের একটা বিশেষ ‘গুণ’ বার বার রাজ্যবাসির চোখে পড়ছে। বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের দৈনিক মুখপত্র হওয়ার সুবাদে আগামী দিনে তৃণমূলীরা কোন্ কোন্ নেতা বা বুদ্ধিজীবীর ওপর আঘাত হানবে বা জনগণের ওপর ঠিক কী কী আক্রমণ নামিয়ে আনবে তা বেশ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কাগজটা পড়লে। গত ৯ই মে’র উত্তরসম্পাদকীয় প্রবন্ধ এমনই এক ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট ছবি তুলে ধরেছে। ১-টাকা দরে বিঘার পর বিঘা জমি ও তিন-তিন খানা সাংসদ হাতিয়ে সপুত্র ‘বাবু’ টুটু বসু ও ‘নফর’ কুণাল ঘোষ দিদি-র চটির কাদা চেটে তুলবেন পণ করেছেন। সরকারী বদান্যতায় এদের সাহস এতই বেড়েছে যে এরা ভাবছেন ফ্যাসিবাদের ‘পথের কাঁটা’ উপড়ে ফেলার শক্তিও এদের আছে। সেই উদ্দেশ্যেই এরা জনৈক অভিজিৎ ঘোষ-কে মঞ্চে নামিয়েছেন আমাদের প্রধান সম্পাদক ও প্রখ্যাত বামপন্থী লেখক কমরেড আজিজুল হকের বিরুদ্ধে।
গত এক-দু’বছর ধরে বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়াও মমতা ব্যানার্জি বিরামহীনভাবে রাজ্যের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছেন। প্রথম প্রথম এটা অনেকের কাছে উপভোগ্য মনে হলেও, আজ আর তা মনে হচ্ছে না। উলটে ক্ষোভের মাত্রা বাড়ছে। সহ্যের সব সীমা অতিক্রম ক’রে গেছে নেত্রীর নবতম খোশখেয়াল—২৫-এ বৈশাখ পালনের সময় পরিবর্তন। প্রতি বছর ভোর ৬-টা থেকে রবীন্দ্রসদন চত্বর সেজে ওঠে উৎসবের মেজাজে। হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। শুধু কলকাতা নয়—বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষ ছুটে আসেন। জনতার ঢল নামে। কিন্তু এতে ‘সংস্কৃতি মনস্ক’ মমতা এবং তার পারিষদদের ভারি অসুবিধা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর—ক্লান্ত মুখ্যমন্ত্রী ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠতে পারেন না (যদিও হিলারি ম্যাডামের সাথে ‘হিলেরিয়াস’ আলোচনার ব্যাপারে তিনি দারুণ সিরিয়াস—সকাল ৯টার মধ্যে স্নান-টান ক’রে মহাকরণে উপস্থিত!), তাঁর চ্যালা-চামুণ্ডাদেরও একই ব্যাপার। তাই এত দিনের ঐতিহ্য চুলোয় দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর সময় পালটে দুপুর বেলা করা হ’ল। যাঁর ক্যাবিনেটের অন্যতম সদস্য বিকেল ৫-টা থেকেই এক বিশেষ পথে চলা-ফেরা করেন (শ্রী অরুণাভ ঘোষকে ধন্যবাদ), তাঁর পক্ষে এ হেন আবদার স্বাভাবিক। কিন্তু সত্য উচ্চারণ করার শংকর দাস ব্যানার্জি-সুলভ ‘হিম্মৎ’ তাঁর নেই (শংকরবাবু একদা মন্ত্রী থাকাকালীন বিধান সভায় দাঁড়িয়ে বিলিতি পানীয়ের পেছনে নিজের বাৎসরিক খরচের হিসাব দিয়ে সততার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন)। অতএব বলির পাঁঠা জনগণ।
মুখ্যমন্ত্রীর এই হীরক রাজা থুড়ি রানি মার্কা আচরণে যারপরনাই ক্রুদ্ধ সাধারণ মানুষ ঠিক করেন তাঁরা ঐ ফতোয়া মানবেন না; ভোর ৬-টা ৩০ মিনিটে প্রভাত ফেরির পর কবিগুরুর মূর্তিতে মাল্যদান ক’রে তাঁর ১৫১-তম জন্মদিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের সাথে সাথে রেখে আসবেন প্রতিবাদের স্বাক্ষর। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে মেলেন সদনের সামনে। কমরেড আজিজুল হক-সহ আরও অনেককে তাঁরা আমন্ত্রণ জানান এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে। এই অরাজক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বরাবরের মতোই সোচ্চার হয়ে ওঠেন আজিজুল—রাজনীতি ছাড়াও রবীন্দ্র সদন আন্দোলনের ইতিহাসে যাঁর উজ্জ্বল ভূমিকার কথা আমরা সকলেই জানি। বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হয় তাঁর বলিষ্ঠ ফ্যাসি-বিরোধী বক্তব্য।
এদিকে টেলিভিশন খুলে চামচা বাহিনীর চক্ষুঃ ছানাবড়া। যে লোকটাকে জেলের ভেতর পিটিয়ে পিটিয়ে তারা অর্ধপঙ্গু ক’রে দিয়েছে, হাতের সব কটা আঙুল ভেঙে দিয়েছে যাতে সে কলম ধরতে না পারে, পায়ের তলা পুড়িয়ে দিয়েছে যাতে মানুষটার চলা-ফেরা বন্ধ হয়ে যায়—সেই লোকটাই কি-না আজও তাদের তাড়া ক’রে বেড়াচ্ছে! এর পরেই অভিজিৎ ঘোষ-কে নামানো হয় কলম হাতে বাঁদর নাচ নাচতে। নিজেকে রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক প্রমাণ করতে খিস্তি-খেঁউড়ের বন্যা বইয়ে দেন তিনি। ইতরামো এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তিনি লিখে বসেন, আজিজুল না-কি রাষ্ট্রের কাছ থেকে বেঁচে থাকার যাবতীয় উপাদান সংগ্রহ ক’রে বিপ্লবীর ভেক ধরেছেন। আসলে অভিজিৎ ঘোষের মতো পেটোয়া কলমচিরা সকলকেই তার মনিব কুণাল ঘোষের প্রোটোটাইপ মনে করেন। যে কুণালবাবু আজ পরিবর্তনের আঁচে গা সেঁকে কালীঘাটের থানে তেল-সিঁদুর মাখছেন, তিনিই বামফ্রন্ট আমলে আলিমুদ্দিনের কাঁঠাল পাতা খেয়ে গায়ে চর্বি জড়িয়েছিলেন। অনিল বিশ্বাস না থাকলে কোথায় ঠাই হতো ওনার? অভিজিৎবাবু ভুলে গেছেন—যখন তারা বাম নেতাদের ধ’রে আত্মোন্নতির চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন, তখন আজিজুল একটানা ৮-বছর জেল খেটেছেন, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়েছেন, সংসার থেকে সন্তান—সকলকে হারিয়েছেন। ‘প্রতিদিন’-এর এহেন তথ্য-প্রমাণহীন জঘন্য কুৎসার নমুনা দেখে মনে প’রে যায় লেনিনের সেই কথা, যা তিনি রাষ্ট্রের দয়ায় প্রতিপালিত ধান্দাবাজ খিস্তিবিশারদ-দের সম্পর্কে বলেছিলেন—‘in politics abusive language often serves as a screen for utter lack of principles and sterility, impotence, angry impotence, on the part of those who use such language.
অবশ্য এই ‘angry impotence’-এর কারণেই অভিজিৎবাবু দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এমন কিছু বলে ফেলেছেন যার থেকে আগামী দিনে বাংলার মানুষের কণ্ঠরোধ হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। আবেগের বশে তিনি এক জায়গায় লিখেছেন—‘বাক্-স্বাধীনতায় লাগাম এখনও চালু হয় নি বাংলায়।’ প্রশ্ন হ’ল, এটা কি নিছক কথার কথা? নাহঃ, তা নয়। ক’দিন আগে যখন বিভিন্ন পাঠাগারে পেটোয়া সংবাদপত্র ছাড়া অন্য কোনও কাগজ নেওয়া যাবে না ব’লে রাজ্য সরকার হুকুমনামা জারী করছিল, তখন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন—আগামী দিনে মানুষ কি পড়বে না পড়বে তাও তিনিই ঠিক ক’রে দেবেন, অর্থাৎ তাঁর কথাটাই চূড়ান্ত হিসাবে মেনে নিতে হবে। এক নেত্রী, এক চিন্তা, এক কথা— রাজবৃত্তের পেটে লোকবৃত্তের হজম হয়ে যাওয়া, ফ্যাসিবাদ। মমতার সেদিনের কথাটাই তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছে ‘প্রতিদিন’ পত্রিকা। তাদের আবেদন—হরণ করো বাক্-স্বাধীনতা, পালন করো সেদিনের প্রতিশ্রুতি। খুব বেশী দিন নেই, বাংলার মানুষের কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেবে ঐ ফ্যাসিস্ট সরকার।
তবে বিপজ্জনক ইঙ্গিতের এই শেষ নয়। আরও আছে। আজিজুল-কে মশিলিপ্ত করতে গিয়ে অভিজিৎ ঘোষ এক জায়গায় লিখেছেন—‘স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে যে সব যুবকদের কার্যত খুন করেছেন তিনি (পুলিশের গুলিতে ওই যুবকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে খুনের প্ররোচনার ভাগীদার আজিজুলও)...’ তার ‘দায়ে কেনই-বা গ্রেফতার করা হবে না মহান এই বিপ্লবীকে?’ ঝুলি থেকে বেড়াল বেড়িয়ে পড়েছে। মমতার তৎকালীন সাঙাত কংগ্রেসী-দের নির্দেশেই যে ’৭০-এর ঝড়ো দিনগুলোতে পুলিশ ও কং-গুণ্ডারা মিলে বিপ্লবীদের খুন করেছিল—এটা সুকৌশলে চেপে গেছেন লেখক। আসল রাগটা তার অন্য জায়গায়। নকশালপন্থী বিপ্লবীরা সে আমলে বাংলার গ্রামাঞ্চল থেকে অত্যাচারী কংগ্রেসী জোতদার-দের প্রায় নিশ্চিহ্ন ক’রে দিয়েছিল। তার বদলা নিতে সিদ্ধার্থ রায় নামক নরাধমের নেতৃত্বে বিপ্লবীদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলেছিল মমতার পূর্বসূরিরা। কারোর ‘প্ররোচনায়’ নয়, দেশকে, দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে ভালবেসে সেদিন নকশালপন্থীরা প্রাণ দিয়েছিলেন। পুলিশ কাস্টাডিতে খুন করা হয়েছিল চারু মজুমদার, দ্রোণাচার্য ঘোষ-দের। গুম করা হয়েছিল সরোজ দত্ত-কে। আজ সেই বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান যোগসূত্র আজিজুল হক-কে যদি কোনও একটা ছুতোয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, কোনও একটা গল্প ফেঁদে যদি তাকে হত্যা করা যায়, তাহলে আর চিন্তা নেই! সাম্রাজ্যবাদী সাহায্যপুষ্ট সামন্ততন্ত্রের এই পুনরুত্থানের যুগে লক্ষ মানুষের প্রতিবাদের কণ্ঠস্বরকে স্তিমিত ক’রে দেওয়া যাবে। গত প্রায় দের বছর ধ’রে আজিজুল হক-কে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলী মাস্তানের দল। এবার তাতে ফ্যাসিস্ট হেডকোয়ার্টারের অনুমতির সীলমোহর লাগাল ‘প্রতিদিন’। সোজা কথায়—আজিজুল-কে খুন করার যুক্তি সাজাচ্ছে ওরা। যে লোকটা জীবনের ১৮-টা বছর কারান্তরালে কাটিয়েছে তাকে জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, এটা ওরা বোঝে। এই সব লিখে আসলে তৃণমূলী লুম্পেন বাহিনীকে আজিজুলের বিরুদ্ধে ‘সিগনাল’ পাঠাল ‘প্রতিদিন’, যাতে সময় সুযোগ মতো ‘কাম তামাম’ ক’রে দেওয়া যায়।
কিন্তু আজিজুল তো আর পরিবর্তনপন্থীদের মতো গা-বাঁচানেওলা নন যে এসবকে ভয় পাবেন। তাই খিস্তি এবং হুমকিবাজিতে খুব একটা কাজ হবে না জেনে অভিজিৎ ঘোষ কমরেড হক-সহ ভারতের সমস্ত কম্যুনিস্ট-এর গায়ে ‘রবীন্দ্র-বিরোধী’-র তকমা সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলার আপামর জনসাধারণকে যদি এই মিথ্যা গিলিয়ে দেওয়া যায় তাহলেই কেল্লা ফতে! কম্যুনিস্ট-রা না-কি রবীন্দ্রনাথ-কে বিলকুল সহ্য করতে পারে না। এর স্বপক্ষে দালালদের যুক্তি—কম্যুনিস্ট-রা রবি ঠাকুর-কে অবজ্ঞা করার জন্য ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ ব’লে শ্লোগান দেয়, ইত্যাদি। আগেই বলেছি, ‘প্রতিদিন’-এর মেধার মাপ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও বোঝা কঠিন। ফলে শিক্ষিত বুর্জোয়ার মার-প্যাঁচ এখনও এদের রপ্ত হয় নি। কাঁচা খিলাড়ি অভিজিৎ ঘোষ জানেনই না যে রবি ঠাকুর মারা যাওয়ার পর যে প্রথম ২৫-এ বৈশাখ পালিত হয়, সেই উপলক্ষে কম্যুনিস্ট পার্টির বাংলা কমিটির মুখপত্র ‘জনযুদ্ধ’-তে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর সাথে জাপানি ফ্যাসিস্ট বুদ্ধিজীবী নোগুচির বিতর্কের প্রসঙ্গ উত্থাপন ক’রে ঘোষণা করা হয়—‘আজ রবীন্দ্রনাথের তেজ ও দৃঢ়টা লইয়াই সমস্ত বাংলা আবার এই জাপানি দস্যুদের জবাব দিবে, ক্ষমাহীন, প্রার্থনাহীন সংগ্রামের আগুনে ফাসিজমকে ভস্মসাৎ করিবে।’ রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে সামনে রেখে ভারতের কম্যুনিস্ট-রা বরাবর কাজ করেছে। ১৯৪৬ সালে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কমরেড পূরণ চাঁদ জোশির নির্দেশে বাংলার রেনেসাঁর যে মূল্যায়ন কম্যুনিস্ট পার্টি উপস্থিত করেছিল তাতে রবীন্দ্রনাথের অসামান্য অবদানের কথা বিষদে আলোচিত হয়েছিল। একমাত্র ’৪৮ সালে বাংলা পার্টির সম্পাদক ভবানী সেন রবীন্দ্র গুপ্ত ছদ্মনামে রবীন্দ্রনাথের কঠোর সমালোচনা করেন, যা সমগ্র পার্টিতে প্রত্যাখ্যাত হয়। ভাবানীবাবু-ও এর ফলে আত্মসমালোচনা করতে বাধ্য হন। এমন কি নকশাল আন্দোলনের সময়, যখন সরোজ দত্ত রেনেসাঁর নতুনভাবে মূল্যায়ন করছেন, তখনও রবীন্দ্রনাথের কোনও বিরূপ সমালোচনা করা হয় নি। উলটে দেখা যাবে সরোজ দত্ত-রা সব সময়ই তাঁর মহান চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ ছিলেন। লেনিন যেমন তলস্তয়-কে বলেছিলেন ‘রুশ বিপ্লবের আয়না’, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেও  তাঁদের ধারণা অনেকটা সেরকমই ছিল। আর ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’? সেদিনের এই শ্লোগানের মূল অর্থ—পুঁজিবাদের ধ্বংসের যুগে কম্যুনিস্ট পার্টিগুলোর ওপর মাও চিন্তাধারার মতাদর্শগত কর্তৃত্ব। এর সাথে রবীন্দ্র অবমাননার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই যারা এসব নিয়ে হল্লা করেন, তারা আদতে প্রাইমারী ইশকুলের গণ্ডি পেরবারও যোগ্য নন। অভিজিৎ ঘোষের অবগতির জন্যে এও জানিয়ে রাখি—তিনি যদি একটু খোঁজ-খবর নেন, তাহলে জানতে পারবেন, প্রজাতান্ত্রিক চিনের সরকার কর্তৃক ১৬ খণ্ডে চিনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলী বহু যুগ হ’ল প্রকাশিত হয়েছে।
যাইহোক, শত ষড়যন্ত্র, শত কুৎসা ক’রেও আজিজুল হক-কে জনতার চোখে খাটো করা যাবে না, কারণ মানুষ নিজের চোখে দেখেছেন তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটা অধ্যায়। উলটো দিকে ফ্যাসিস্ট-দের কাণ্ডকারখানাও মানুষ দেখছেন। তাঁদের রাগ পুঞ্জিভূত হচ্ছে। টুটু-কুণালরা যেন ভুলে না যান মুসোলিনির পরিণতির কথা। সে একা ঝোলে নি, রক্ষিতা সমেত তাকে মাংসের দোকানের লোহার আংটায় লটকে দিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। বাংলার মানুষও এদের নিক্ষেপ করবেন ইতিহাসের আস্তাকুরে। বেশী দেরী নেই আর।

পুনঃ - অভিজিৎ ঘোষের লেখার শিরোনাম ‘রক্তে যার হাত রাঙা, তার নীতিজ্ঞান শুনব না’। এমন একটা ‘টাইটেল’ দিয়ে উনি আসলে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। সরোজ দত্ত সঠিকভাবেই বলতেন—‘অনেক সময় নিজের আরশিতে যে মুখ ঝাপসা দেখা যায়, শত্রুর আরশিতে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।’ আমরা অভিজিৎবাবু-কে বলতে চাই, এই মুহূর্তে আমাদের ঐ দুটো রক্তে রাঙা হাতই ভীষণ প্রয়োজন, কারণ মহান জননেত্রী কমরেড ক্লারা জেতকিন আমাদের শিখিয়েছেন—‘Whenever Fascism uses violence, it must be met with proletarian violence.

No comments:

Post a Comment