গত ক’বছরে
টেলি মিডিয়ার বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বর-বৌ-আণ্ডাবাচ্চা—সবাই বোকা বাক্সের সামনে। পলকহীন চোখে চেয়ে আছে; শাড়ীর প্রিন্ট থেকে গুণ্ডামি-চামচামি, রামদেববাবা
থেকে রাহুলবাবা...। রীতিমতো গিলছে। একটার পর একটা। এদের মধ্যে যারা সিরিয়াস দর্শক তাদের জন্যে
বাড়তি পাওনা খবর আর টক-শো। ‘ইয়াং গান’-দের আবার
গান খুব ফেভারিট, ফোক হলে তো কথাই নেই! কাঁপা কাঁপা
রূপম-কণ্ঠে বেচারা রজনীকান্ত অবলীলায় ‘প্রচলিত কীর্তন’
হয়ে যাচ্ছেন। পছন্দের ব্যাপারে অবশ্য এদের মধ্যে নানা মতভেদ আছে। কেও হাল্কা
ট্যাঁস, কেও দুরন্ত
ইন্টেলেকচুয়াল...। যেমন যাদবপুর,
প্রেসিডেন্সীর উদীয়মানরা অনেক বেশী ‘শু-মনে’ থাকে—‘বাইসিকল চোর’-দের নিয়ে
মোটেও সময় খরচা করতে তারা রাজি নয়। রাঢ়ী বামুন থেকে সেকুলার মোল্লা—এই রেভোল্যুশানারী মেটামরফোসিস নিয়েই তাদের
কারবার। পর্দার ভেতর থেকে গুরু উপদেশ দিচ্ছেন, পবিত্র সুরার
মতো তা চুঁইয়ে
চুঁইয়ে নেমে আসছে শিষ্যদের কান ছুঁয়ে। গলিত প্রলাপ? ওগো আগামীর আঁতেল, তোমায়
দিলাম।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে ভালোবাসায় চিড় ধরেছে অনেক দিন
(এক দলে দুই মেগালোমেনিয়াক? হয় নাকি!)। তৃণমূলের শ্যু-এ পা
ঢুকিয়ে মনে অশান্তি, গোড়ালিতে ফোস্কা।
কিন্তু ছাড়ব কি ছাড়ব না ভেবে ভেবে হায় রে ছাড়া তো হচ্ছে না। সাংসদ কবির সুমন তাই
ক্ষণে ক্ষণে বিদ্রোহ করছেন। বাকি সময়টা ব্যবহার করছেন অন্তর্জালে গান গেয়ে, লেখা-লিখি ক’রে। কখনো বা ‘দাস স্পেক মকবুল’! টুকটাক
অনুষ্ঠান এবং ‘প্রগতিশীল’ চ্যানেলে মুখ
দেখানও চলছে।
ইলেকশনে সুজনে-সুমনে যে দ্বৈরথ হয়েছিল, তা এখন মিয়ানো মুড়ির অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে।
পরিবর্তনের ঠ্যালায় ‘জেনেগেণ’-এর নেতা
শহীদ হয়েছেন। ফলে গেওর্গ লুকাট্চ-এর গুণগ্রাহী এখন তিন ছটাক মাওবাদী, এক ছটাক গান্ধীবাদী। সিপিএম-এর লোকজন ওঁত
পেতে ছিল। সুযোগটা তারা ভরপুর নিয়েছে। গৌতম দেবের ‘রেট্-রিক’-এর চেয়ে কবির সুমনের ‘রেটোরিক’ ঢের বেশী পেনিট্রেটিং—“খাও, খাও, খাও...”। মাসে একবার
অন্তত ‘প্রগতিশীল’ ক্যামেরায়
সুমন উপস্থিত হচ্ছেন। রাজনীতি, সঙ্গীত, সভ্যতা ইত্যাদি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করছেন। তিনি বাংলাদেশের জামাই, সুযোগ পেলেই শ্বশুরালয়ের প্রতি
সুমনীয় ঢঙে কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করছেন। প্রয়োজনের তাগিদে বন্ধ্যা নারীও ফলবতী হচ্ছে, নেকড়ার পুতুল প্রসব ক’রে। “মুজিব” কলরবে এপার ওপার অপার হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ
বিস্মৃত হচ্ছেন সিরাজ শিকদার।
তা হোন। সুমন তো আর পলিটিক্স-এর লোক নন। একজন শিল্পী মাত্র। মাও-কে কখন হাতে রাখবেন, কখন পাছায় রাখবেন এটা একান্তই ওনার
ব্যক্তিগত ব্যাপার। অতএব...।
কিন্তু ঐ যে, একজন কাওকে ছোট না করলে অন্য কাওকে বড় করা যায় না। এটা শিল্পীও বোঝেন। শ্বশুরবাড়িকে বড় করতে তাই বাপেরবাড়ির কপাল পুড়ছে। না না, তেমন কিছু না। দু-চারটে মিথ্যে বলেছেন,
এই আর কি! বার বার বলতে বলতে মিথ্যেগুলোই একদিন সত্যি হবে। ফোকলা
মুখে কাঁকর আটকাল তো কী হ’ল?
তিন কুড়ি পেরিয়ে সুমন আজকাল বড় নস্টালজিক হয়ে পড়েছেন। কথায়
কথায় উঠে আসছে ’৭১ সাল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিবুর রহমান...।
আবেগতাড়িত হয়ে কখনো কখনো তিনি এপার বাংলার মানুষের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন—এরা একটা গান তৈরি করলো না বাংলাদেশ নিয়ে?! ধিককার!
সত্যি, পশ্চিমবঙ্গবাসী
বড়ই কৃতঘ্ন। কোনও সেন্স অব সলিডারিটি নেই। কিন্তু এটা বলতে তো ইতিহাস বিকৃতির
প্রয়োজন পড়ে না। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? আচ্ছা, তাহলে একটু খুলেই বলা যাক। মাননীয় কবির সুমনের দাবী এই যে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটা গোটা গান শ্রী অংশুমান রায় বাদে এপার
বাংলায় আর কেও গান নি। পশ্চিমবঙ্গবাসীর এই আচরণে তিনি বড়ই ব্যথিত, ক্ষুব্ধও বটে। একবার নয়, আজকাল সুমন যেখানেই যান,
সেখানেই এটা বলেন। এযুগের আঁতেল থেকে সে-যুগের জ্ঞানী-গুণী বোদ্ধারা
এর বিরুদ্ধে সামান্য রা কাটেন না। কাটবেনই বা কী ক’রে! যদি
লোকটা চোস্ত জর্মনে খিস্তি ছুঁড়ে দেয়?! আঁতেল মহলে এক ঘরে
হয়ে যেতে হবে যে! এমনিই তো ছোট্ট গোষ্ঠী, এর পিঠে খুজলি হলে
ও চুলকে দেয়। সেখানে কুলপতিকে চটিয়ে লাভ আছে?
বলা বাহুল্য, সুমনের দেওয়া এই তথ্যে সামান্য সত্যেরও আভাষ নেই। শ্রী অংশুমান রায়ের “শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ্য মুজিবরের...” গান
খানা বাদ দিয়েও আরও দুটো গান আছে যেগুলো কেবলমাত্র বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ওপরেই
লেখা। গানের কথা শ্রী সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (রবি ঠাকুরের নাতি এবং আরসিপিআই
নেতা), সুরারোপ ও কণ্ঠ শ্রী দেবব্রত বিশ্বাসের। হিন্দুস্থান
রেকর্ডিং কোম্পানি থেকে প্রকাশিত রেকর্ডের এক পিঠে ছিল “ঐ তারা চলে দলে দলে মুক্তি পতাকাতলে”,
অন্য পিঠে “শোনো বাংলার জনসমুদ্রে জোয়ারের
হুংকার”। গান দুটো যথেষ্ট পরিমাণে মানুষের কাছে পৌঁছেছিল।
দেবব্রত বিশ্বাসেরে জবানীতে বললে, “সৌম্যদার গানের রেকর্ড
যথাসময়েই প্রকাশিত হয়েছিল এবং বেশ কিছু সংখ্যা বিক্রিও হয়েছিল।”
এমন নয় যে শ্রী সুধীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের
পুত্র মাননীয় কবির সুমন এই দুটো গানের কথা জানেন না। কিন্তু তিনি বেমালুম সেটা
চেপে গেছেন। কারণটা অবশ্য আন্দাজ করা যায়। কোনও এক সুমন-ঘনিষ্ঠের কাছে শুনেছিলাম
তিনি দেবব্রত বিশ্বাসকে মোটেই পছন্দ করেন না। তাই যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা
হতে বাধ্য। কিন্তু বাংলায় দাঁড়িয়ে দেবব্রত বিশ্বাসকে গালাগাল করার মতো ধক তিনি
এখনও অর্জন করতে পারেন নি। তাই অস্ত্র কন্সপিরেসি অব সাইলেন্স। চুপ ক’রে থেকে, তথ্য গোপন ক’রে লোকটার নামটাই ভুলিয়ে দাও। বার বার বল অংশুমান রায় বাদে আর কেও নেই নেই
নেই...। অপছন্দের ইতিহাস হারিয়ে যাক।
তবে সুমনের খেলার ধরনটা পাক্কা ওস্তাদের। তিনি আনাড়ি নন।
স্মৃতি হত্যা আগেও করেছেন, কিন্তু একান্তই
তাঁর নিজস্ব স্টাইলে। নন্দনতত্ত্ব যে ওঁর কেনা বাঁদি!
সুমন হামেশাই বলে থাকেন অতীত যুগের সেই সব মহা মানবদের কথা, বলেন, "আধুনিকতা
জিনিষটা আজকের আবিষ্কার নয়, তার বয়স ১০০/১৫০ বছরেরও
বেশী।" হ্যাঁ, ঠিকই বলেন। কিন্তু এগুলো বলে খুব কৌশলে
ইমেডিয়েট পাস্ট ভুলিয়ে দেন। শ্রী পঙ্কজকুমার মল্লিক কি শ্রী সলিল চৌধুরীর
উত্তরাধিকার যেমন তিনি বহন ক’রে চলেছেন, তেমনই বয়ে নিয়ে চলেছেন গণনাট্যসহ অরুনেন্দু দাস, গৌতম
চট্টোপাধ্যায়দের ঋণ। দ্বিতীয় দলের কাছেও যে তিনি ঋণী সেটা সুমন কোনোদিন স্বীকার
করেন নি, করেন না। কথা বলার অসামান্য
দক্ষতায় ভুলিয়ে রেখেছেন জগতকে। আমরাও গণেশ ঠাকুরের বাহন হয়ে চলেছি পিছু পিছু।
“ক্যু ভারেস”? কোথায়
চলেছ প্রভু? না, প্রভু একা নন, মূষিককুলও চলেছে। বিস্মৃতির খাদের আগায় প্রভু দাঁড়িয়ে যাবেন, ঝপ ঝপ ক’রে আছড়ে পড়বে ইঁদুরগুলো। ‘হ্যামেলিনের বাঁশীওলা, কলকাতার ‘গানওলা’... কি অদ্ভুত মিল, তাই
না?
bah chomotkar
ReplyDeleteশুধু সুমন গানওয়ালা কেনো? এই উক্তিটি বাংলার আরো অনেক আলোকিত অনালোকিত বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এদের সবার সম্প্ররকেই আপ্নি উপসঙ্ঘারে বলতে পারেনঃ “ক্যু ভারেস”? কোথায় চলেছ প্রভু? না, প্রভু একা নন, মূষিককুলও চলেছে। বিস্মৃতির খাদের আগায় প্রভু দাঁড়িয়ে যাবেন, ঝপ ঝপ ক’রে আছড়ে পড়বে ইঁদুরগুলো। ‘হ্যামেলিনের বাঁশীওলা’...
ReplyDeleteNJ Sportsbook - The New Jersey Lottery
ReplyDeleteLearn 영천 출장샵 about the New Jersey 안산 출장샵 Lottery, including 김포 출장마사지 legal sports betting options, prize tiers, and the latest lottery 춘천 출장마사지 news. Rating: 5 · 1 충청북도 출장샵 review